
রাতেও অক্সিজেন দেয় যে সব গাছ
প্রবাদ আছে : রাতে গাছের নিচে থাকতে নেই। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা : রাতে গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ে। তবে কিছু উদ্ভিদ রাতেও অক্সিজেন বিলিয়ে যায়।
আর এ ধরনের গাছ ঘরের ভেতর কিংবা বাইরে থাকলে দেহ-মন থাকে সুস্থ। আমরা সবাই জানি গাছ দিনে অক্সিজেন দেয়, আর রাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়ে।
তবে কিছু কিছু গাছের ভিন্নতাও রয়েছে। যারা রাতেও অক্সিজেন ত্যাগ করে। এ-সকল গাছ ঘরে রাখলে আপনার আশেপাশের পরিবেশ আরো সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
যে ছয় প্রজাতির গাছ রাতে অক্সিজেন দেয়
অ্যালোভেরা
ঘৃতকুমারী, যার ইংরেজি নাম অ্যালোভেরা। সবার কাছে এটি অ্যালোভেরা নামেই বেশি পরিচিত। এটি বহুজীবী ভেষজ উদ্ভিদ এবং দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মতো।
এর পাতাগুলি পুরু, দু’ধারে করাতের মতো কাঁটা এবং ভেতরে লালার মতো পিচ্ছিল শাঁস থাকে। সবরকম জমিতেই ঘৃতকুমারী চাষ সম্ভব।
তবে দোঁআশ ও অল্প বালি মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
উপকারী গাছের তালিকায় বরাবরই শীর্ঘস্থানটা অ্যলোভেরার দখলে। বাতাস সুস্থ রাখতে আমেরিকার নাসার অন্দরে পর্যন্ত রাখা রয়েছে এই গাছ।
এই গাছ রাতের বেলা অক্সিজেন নিঃসরণ করে এবং আয়ু বাড়ায়।
গাছটির পেছনে কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। আবার ত্বকের বিভিন্ন উপকারে আসে এই ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা।
স্নেক প্ল্যান্ট
অ্যালোভেরার মতো এটিও রাতে অক্সিজেন ছাড়ে। এই গাছ কিন্তু আমাদের চারপাশেই দেখতে পাওয়া যায়।
অথচ এর গুণ সম্পর্কে আমরা মোটেও ওয়াকিবহাল নই।
শুধু তাই নয়, গাছটি আবার রোগ নিরাময়ের কাজেও লাগে। এর নাম স্নেক প্ল্যান্ট। আবার অনেকে ‘শাশুড়ির জিভ’ও বলেন।
পাতার আকৃতির জন্যই এ ধরনের নাম গাছটির। এটি এক ধরনের বাহারি গাছ। ঘর সাজানোর কাজে আমরা হরহামেশাই ব্যবহার করে থাকি।
সৌন্দর্য বাড়াতে বেডরুমেও অনেকে রাখেন। খুব অল্প আলোতে এবং কম পানিতেও এরা জীবিত থাকে।
এই গাছ যদি ঘরে রাখা যায়, তা হলে ঘরে অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না।
নাসার বিজ্ঞানীরা একটি সমীক্ষা করে দেখেছেন, ঘরের ভেতর এই গাছ রাখলে নাইট্রোডেন ডাই অক্সাইড এবং ফর্ম্যালডিহাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসকে শোষণ করে ঘরকে দূষণমুক্ত রাখে।
এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারী দিক হলো—গাছটি প্রতিনিয়ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করতে থাকে।
সে-কারণে ঘরে এই গাছ থাকলে দিন ও রাতে মিলবে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
অশ্বত্থ
একটি কুসংস্কার প্রচলিত আছে : অশ্বত্থ গাছের নিচে কখনো ঘুমোতে নেই।
ঘুম তো দূরের কথা, রাতে নাকি অশ্বত্থ গাছ থেকে শতহস্ত দূরে থাকতে হয়। না-হলে নাকি ভূতে ধরে!
অথচ এই অশ্বত্থ গাছই আপনার আয়ু কয়েক বছর বাড়িয়ে দিতে পারে? কারণ, পৃথিবীতে যে হাতে গোনা কয়েকটি গাছ রাতে অক্সিজেন দেয়, তার মধ্যে অশ্বত্থ হলো একটি।
এই গাছ নিয়ে কুসংস্কারের অন্ত নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য এই গাছ খুব উপকারী।
শুধু রাতেও অক্সিজেন ছাড়ে বলে নয়, এই গাছ অনেক রোগ নিরাময়ের কাজেও ব্যবহার করা হয়।
বিশেষ করে, শ্বাসকষ্টের রোগ সারাতে খুব উপকারে লাগে অশ্বত্থ গাছ।
পিপুল
রাতে অক্সিজেন তো ছাড়েই, পাশাপাশি ডায়াবেটিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষ কার্যকর এটি।
এ ছাড়া পিপুল পাতা মাছের ঝোলের সাথে রান্না করে খেলে কাশিতে উপকার পাওয়া যায়। সবচাইতে উপকার হয়—মেদ ভূড়িতে যারা কষ্টে আছেন।
তাদের জন্য ২৫০ মি.গ্রা. পিপুল চূর্ণ, আধা চা চামচ মধুর সঙ্গে খাওয়ার ১৫ মিনিট আগে এক কাপ অল্প গরম পানিসহ মাস খানেক খেলে উপকার পাবেন।
নিম
নিমের গুণাগুণ অপরিসীম। এটিও রাতে বাতাস শুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
নিম গাছ সাধারণত বাড়ির বাইরে থাকে। কিন্তু ভেতরেও নিম গাছ লাগানো যেতে পারে।
বিশেষ করে, বাড়ির মাঝখানে নিম গাছ রাখলে ফল মেলে ভালো।
বাতাস শুদ্ধ করা ছাড়া প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে পোকামাকড় দূর করতেও সাহায্য করে নিম গাছ।
অর্কিড
অর্কিডের সৌন্দর্যের তুলনা নেই। বেডরুমে বিছানার পাশে অর্কিড রাখলে ঘরের সৌন্দর্যই পালটে যায়। কিন্তু জানেন কি, এই গাছ রাতে আপনাকে কতটা সুস্থ রাখে?
সাধারণত গাছ যে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে অক্সিজেন তৈরি করে, তাতে সূর্যালোক প্রয়োজন হয়৷
তাই রাতে সে প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে৷ কিন্তু অ্যালোভেরা, স্নেক প্ল্যান্ট ও অশ্বত্থ গাছের মতো অর্কিডও রাতে অক্সিজেন ত্যাগ করে।
এভাবে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে অর্কিড। এর ফলে রাতেও আপনার ঘর থাকবে অক্সিজেনে পরিপূর্ণ।
সুন্দর এবং উপকারী এই উদ্ভিদ বিছানার পাশে রাখার জন্য আদর্শ। রাতে অক্সিজেন নিঃসরণের পাশাপাশি রংয়ের মধ্যে থাকা ‘জাইলিন’ নামক দূষিত উপাদান দূর করে।
ফলে ঘর সর্বদা সতেজ বাতাসে পরিপূর্ণ থাকে।
—ডেস্ক শুভ কৃষি
…………………
[সুপ্রিয় পাঠক, আপনিও শুভ কৃষি’র অংশ হয়ে উঠুন। কৃষি সম্পর্কিত দেশে-বিদেশের জানা-অজানা নানা বিষয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট ছবিসহ মেইল করুন : krishibdagriculture@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট-ছবি পাওয়া না-গেলে সমস্যা নেই। আমরা সংগ্রহ করে প্রকাশ করব। আর, আপনি নিজের নামে লেখা প্রকাশ করতে না-চাইলে, ছদ্মনামে অথবা সংগ্রহ হিসেবে প্রকাশ করা যাবে।
আমরা চাই—আপনার অংশগ্রহণ আনন্দপূর্ণ ও বন্ধুত্বের স্মারকে পরিণত হয়ে উঠুক। শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা…]
Average Rating